ইয়াং জিয়ান | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সুই সম্রাট | |||||||||||||||||
রাজত্ব | ৪ মার্চ, ৫৮১ – ১৩ আগস্ট, ৬০৪ | ||||||||||||||||
উত্তরসূরি | সম্রাট ইয়াং | ||||||||||||||||
জন্ম | চাং'আন, উত্তর ঝও | ২১ জুলাই ৫৪১||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৩ আগস্ট ৬০৪ রেনশুউ রাজপ্রাসাদ, বাওজি, সুই, চীন | (বয়স ৬৩)||||||||||||||||
দাম্পত্য সঙ্গী | সম্রাজ্ঞী ওয়েন সিয়ান উপপত্নী চেন উপপত্নী চাই উপপত্নী য়ুচি | ||||||||||||||||
বংশধর | উত্তর ঝও সম্রাজ্ঞী ইয়াং লিহুয়া সুই যুবরাজ ইয়াং ইয়ং সুই সম্রাট ইয়াং সুই যুবরাজ ইয়াং জুন ইয়াং সিউ, শু যুবরাজ ইয়াং আয়ু, যুবরাজ্ঞী লানলিং ইয়াং লিয়াং, হান যুবরাজ সম্রাজ্ঞী সিয়াংগুও যুবরাজ্ঞী গুয়াংপিং যুবরাজ্ঞী ওয়ানান, চেন ডিউকপত্নী | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
পিতা | ইয়াং ঝং, সুই ডিউক[১] | ||||||||||||||||
মাতা | লু গুটাও |
সুই সম্রাট ওয়েন (隋文帝; ২১ জুলাই, ৫৪১ – ১৩ আগস্ট, ৬০৪) ছিলেন চীনের সুই সাম্রাজ্যের (৫৮১ – ৬১৮) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্রাট। তার পারিবারিক নাম ছিল ইয়াং জিয়ান, সিয়ানবেই নাম পালিউরু জিয়ান, এবং ডাকনাম নালুওইয়ান। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং তার সাম্রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য কাজ করেন।[২] জিন সাম্রাজ্য সময়কালের পর চীনকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য তাকে চীনের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ শাসক বলে অভিহিত করা হয়। তার শাসনামলে চীনের মহাপ্রাচীর বর্ধিতকরণের কাজ করা হয় এবং গ্র্যান্ড খাল খনন করা হয়।[৩]
হংনং ইয়াংদের[৪][৫][৬][৭] সুই সম্রাটদের পূর্বপুরুষ হিসেবে ধারণা করা হয়।[৮] ইয়াং জিয়ানের সম্প্রদায় পূর্বপুরুষ ছিলেন হান সাম্রাজ্যের সেনাপ্রধান ইয়াং ঝেন। ইয়াং ঝেনের অষ্টম প্রজন্মের বংশধর ইয়াং সুয়াং ষোল রাজ্য সময়ে পূর্ব ইয়ান বা পরবর্তী ইয়ান রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। তার বংশধরেরা উত্তর ওয়েই সাম্রাজ্যের দায়িত্ব পালন করেন। ইয়াং জিয়ানের পিতা ইয়াং ঝং সেনাপ্রধান ইয়ুওয়েন তাইয়ের পরে উত্তর ওয়েই সাম্রাজ্যের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং ইয়ুওয়েনের রাজপ্রতিনিধি থাকাকালীন উত্তর ওয়েই ও পশ্চিম ওয়েই বিজয়ের ফলে খ্যাতি লাভ করেন।[৯][১০] ইয়াং জিয়ানের মা লেডি লু বর্তমান শাআনশি প্রদেশের ওয়েইনানে ফেংয়ি বৌদ্ধ মন্দিরের তাকে জন্ম দেন। একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনী তাকে দেখে মুগ্ধ হন এবং শিশু অবস্থায় তাকে লালনপালন করেন।[১১] ইয়াং জিয়ান অভিজাত ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের সাথে রাজকীয় কলেজে পড়াশুনা করেন। তিনি ১৪ বছর বয়সে ইয়ুওয়েন তাইয়ের অধীনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।[১২]
৫৫৫ সালে ইয়াং ঝংয়ের বিজয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ইয়াং জিয়ান বেশ কিছু পদ লাভ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চেংজির ডিউক। ৫৫৭ সালে ডুগু সিন তার কাজে মুগ্ধ হয়ে তার কন্যা ডুগু কিয়েলুওকে তার সাথে বিবাহ দেন। জিয়ানের বয়স ছিল তখন ১৬ এবং কিয়েলুওর ১৩ বছর। পরের বছর ইয়ুওয়েনের পুত্র উত্তর ঝং সম্রাট মিং সিংহাসনে আরোহণ করলে, ইয়াং জিয়ানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব প্রধান করা হয় এবং তাকে ডাক্সিনের ডিউক করা হয়। একইভাবে সম্রাট মিংয়ের ভাই উত্তর ঝও সম্রাট য়ুর রাজত্বকালে তাকে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব প্রধান করা হয়। ৫৬৮ সালে ইয়াং ঝংয়ের মৃত্যুর পর তিনি উত্তরাধিকারী সূত্রে সুই সম্প্রদায়ের ডিউক উপাধি লাভ করেন। ৫৭৩ সালে সম্রাট য়ু ইয়াং জিয়ানের কন্যা ইয়াং লিহুয়াকে তার পুত্র যুবরাজ ইয়ুওয়েন সুয়ানের পত্নী ও রাজদরবারের যুবরাজ্ঞী হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ইয়াং জিয়ানকে আরও সম্মান প্রধান করেন। ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, ইয়াং জিয়াংকে রাজদরবারে কম দেখা যেত এবং এতে সম্রাট য়ুর কাছের লোকজন তাকে রাজদ্রোহী কাজের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। সম্রাট য়ুর ভাই কিয়ের যুবরাজ ইয়ুওয়েন সিয়ান এবং সেনাপ্রধান ওয়াং গুই সম্রাটকে তাকে হত্যা করানোর পরামর্শ দেন কিন্তু সম্রাট তাদের বিরত রাখেন। এরপরও ইয়াং জিয়ান তাকে নিয়ে জনরব শুনতে থাকে। তিনি সমস্যা এড়ানোর জন্য ৫৭৫ সালে সম্রাট য়ু যখন তাদের বিরোধী উত্তর কির বিরুদ্ধে অভিযানে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার মেধা প্রয়োগ বন্ধ রাখেন। ইয়াং জিয়ান ৫৭৬ থেকে ৫৭৭ সালে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং সম্রাট য়ু উত্তর কি রাজ্য ধ্বংস করেন এবং দখল করেন।[১৩]
৫৭৮ সালে সম্রাট য়ু মৃত্যুবরণ করেন এবং ইয়ুওয়েন ইয়ুন সম্রাট সুয়ান উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণ করার পরপরই সম্রাট সুয়ান স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন এবং ইয়াং জিয়ানের কন্যা ইয়াংকে সম্রাজ্ঞী করেন। সম্রাট সুয়ান ইয়াং জিয়ানকে সন্দেহ করতে শুরু করেন যদিও তিনি তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। ৫৭৯ সালে সম্রাট সুয়ান তার শিশুপুত্র ইয়ুওয়েন চানকে (সম্রাট সুয়ান ও তার উপপত্নী ঝু মানইয়ুয়ের পুত্র) সিংহাসনের দায়িত্ব দিয়ে অবসরে যান। তিনি তাইশাং হুয়াং বা অবসরপ্রাপ্ত সম্রাট হলেও রাজকীয় ক্ষমতার ব্যবহার করতে থাকেন। এক সময় সম্রাট সুয়াং ইয়াং জিয়ানের উপন এতটা সন্দিহান হন যে তিনি তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইয়াংকে বলেন তিনি তার পিতাকে খুন জবাই করবেন। তিনি ইয়াং জিয়ানকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠান এবং তাদের নির্দেশ দেন যেন তার ব্যবহারে কোনো সন্দেহ প্রকাশ পেলে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ইয়াং জিয়ানের আগমনে কোনো সন্দেহ প্রকাশ না পেলে তিনি রেহাই পান।[১৩]
৫৮০ সালের গ্রীষ্মে সম্রাট সুয়ান চেন সাম্রাজ্য বিজয়ের চিন্তা করেন এবং তিনি চেনদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য ইয়াং জিয়ানকে সেনাপতি হিসেবে ইয়াং প্রদেশে (বর্তমান লু’আন, আনহুই) পাঠান। ইয়াং জিয়ানের যাত্রার পূর্বে সম্রাট সুয়ান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্রাট সুয়ানের দুইজন কাছের বন্ধু লিউ ফাং ও ঝেং য়ি ইয়াং জিয়ানকে রাজপ্রতিনিধির আয়িত্ব গ্রহণের জন্য রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠান। কিছুদিন পরেই সম্রাট সুয়ান মারা যান এবং লিউ ও ঝেং সম্রাট সুয়ানের হয়ে ইয়াং জিয়ানকে রাজপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য রাজকীয় নির্দেশ দেন।[১৪]
ইয়াং জিয়ান সম্রাট সুয়ানের সকল বাজে ও নিষ্ঠুর নীতি তুলে দিলে রাজধানীর কর্মকর্তারা খুশি হয়। তিনি নিজেকে পরিশ্রমী ও অমিতব্যয়ী হিসেবে প্রদর্শন করেন, যা জনগণকেও খুশি করে। তিনি সেনাপ্রধান ইয়ুচি জিওংয়ের অভিপ্রায়ে ভীত হন এবং তাকে সিয়াং প্রদেশ (বর্তমান হানডান, হপেই প্রদেশ) থেকে রাজধানী নিয়ে আসতে লোক পাঠান। ইয়ুচি তার আহ্বান প্রত্যাখান করেন এই ভেবে যে ইয়াং জিয়ান সিংহাসন দখল করার মনোকামনা করছেন এবং সিয়াং প্রদেশকে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হন। তিনি অন্যান্য সেনাপ্রধান, সুন প্রদেশের (বর্তমান সিয়াওগান, হুবেই) সেনাপতি সিমা সিয়াওনান এবং য়ি প্রদেশের (বর্তমান চেংডু, সিচুয়ান) সেনাপতি ওয়াং কিয়ানের সমর্থন লাভ করেন। ইয়ুচি বিদ্রোহ শুরুর মাত্র ৬৮ দিনের মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়েই সিয়াওকুয়ান তাকে পরাজিত করে এবং ইয়ুচি আত্মহত্যা করেন। ওয়াং কিয়ানও কিছুদিনের মধ্যে পরাজিত হয় এবং সিমা চেন সাম্রাজ্যে পালিয়ে যায়। ইয়াং জিয়ান আবার তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমনের জন্য ইয়েচেংয়ে অবস্থিত ইয়ুচির সেনা দপ্তর ভেঙ্গে দেন।[১৪]
ইয়ুচির বিদ্রোহের সময়, কয়েকজন ঝও যুবরাজ - সিয়ানের যুবরাজ ইয়ুওয়েন সিয়ান ও ইয়ুওয়েন ঝাও তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। এর জবাবে তিনি ইয়ুওয়েন সিয়ান, ইয়ুওয়েন ঝাও ও ঝাওয়ের ছোট ভাই ইয়ুয়ের যুবরাজ ইয়ুওয়েন শেং এবং তাদের পুত্রদের হত্যা করেন। তিনি সম্রাট জিংকে তাকে পদোন্নতি দিতে বাধ্য করেন এবং তার বংশনাম ইয়াং নামে পরিবর্তন করেন। ৫৮১ সালে নববর্ষের সময়ে তিনি সুই যুবরাজ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ৫৮১ সালের বসন্তে তিনি সম্রাট জিংকে তাকে সিংহাসন প্রদান করতে বাধ্য করলে উত্তর ঝও সময়কাল শেষ হয় এবং সম্রাট ওয়েন উপাধি নিয়ে সুই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[note ১][১৪]
তিনি তার পিতা ইয়াং ঝং এবং মাতা লেডি লুকে মরণোত্তর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী পদ দিয়ে সম্মানিত করেন। তিনি তার স্ত্রী ডুগুকে ডিউকপত্নী থেকে সমাজ্ঞী এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইয়াং ইয়ংকে রাজদরবারের যুবরাজ করেন। এছাড়া তার ভাই ও অন্যান্য পুত্রদের বিভিন্ন রাজ্যের যুবরাজ উপাধি দেন। তিনি প্রথমে উত্তর ঝও সম্রাট জিংকে জিয়ের ডিউক করেন কিন্তু কিছুদিন পর তিনি জিংসহ ইয়ুওয়েন তাইয়ের সকল নাতীদের হত্যা করেন। তিনি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কাজের দায়িত্ব প্রদান করেন গাও জিয়ং, ইয়াং সু এবং সু ওয়েইকে। তিনি অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে একমত হন যে উত্তর ঝওয়ের পতনের মূল কারণ হল যুবরাজদের সীমিত ক্ষমতা, তাই তিনি তার পুত্রদের প্রধান করে বিভিন্ন প্রদেশের পাঠান। তিনি পেই ঝেংকে প্যানেল কোড সহজ করা এবং কঠোর শাস্তির বিধান কমানোর দায়িত্ব দেন। সম্রাট ওয়েন উত্তর ঝও সরকারের ছয় বিভাগ তুলে দেন এবং তার পরিবর্তে পাঁচটি প্রধান দপ্তর – শাংশু শেং (নির্বাহী দপ্তর), মেনসিয়া শেং (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর), নেইশি শেং (আইন প্রণয়ন দপ্তর), রাজগ্রন্থাগার ও নেইশি’ শেং (আদালত, আইন প্রণয়ন দপ্তর থেকে একটু ভিন্ন উচ্চারণ), আরও দুইটি স্বাধীন মাধ্যম, ১১টি স্বাধীন বিভাগ, ও ১২টি সেনা অধিদপ্তর। এই সংস্কার পরবর্তী সাম্রাজ্যসমূহও গ্রহণ করে।[১০]
সম্রাট ওয়েন তুজুয়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় না রাখায় তুজুয়ের শাবোলুয়ে খান আশিনা শেতু, ও আশিনা শেতুর স্ত্রী, উত্তর ঝও যুবরাজ্ঞী কিয়ানজিন (ইয়ুওয়েন ঝাওয়ের কন্যা) উত্তর ঝও ধ্বংস করার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আশিনা শেতু গাও বাওনিংয়ের সাথে যুক্ত হয়ে সীমান্তে কয়েকটি আক্রমণ চালায়। গাও বাওনিং ছিলেন উত্তর কির সেনাপ্রধান এবং তিনি তখনো য়িং প্রদেশ (বর্তমান ঝাওইয়াং, লিয়াওনিং) দখল করে ছিলেন। জবাবে সেনাপ্রধান ঝাংসুন শেংয়ের পরামর্শ অনুযায়ী সম্রাট ওয়েন আশিনা শেতুর অনুগত খানদের – তার চাচা ডাতুও খান আশিনা ডিয়ানজুয়ে, চাচাতো ভাই আবো খান আশিনা ডাসিয়ানবিয়ান, এবং ভাই আশিনা চুলুওহুওকে সন্তুষ্ট করেন, যাতে তারা একত্রে সুইদের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণে না যেতে পারে। তার এই কৌশল কাজে দেয়।
৫৮১ সালে সম্রাট ওয়েন চেনদের আক্রমণ আক্রমণ করেন এবং তা সফল হয়। কিন্তু ৫৮২ সালের বসন্তে চেন সম্রাট সুয়ান-এর মৃত্যুর খবর শুনে তিনি এই ভেবে আক্রমণ প্রত্যাহার করেন যে যে রাজ্যের সম্রাট মারা গেছে সে রাজ্যে আক্রমণ করা ভালো দেখায় না।
৫৮২ সালে সম্রাট ওয়েন মনে করলেন চাংআন ছোট শহর তাই তিনি নিকটে তার রাজধানী নির্মাণ করলেন এবং নাম দিলেন ডাক্সিং এবং ৫৮৩ সালে তিনি ডাক্সিংয়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন। এরপর থেকে ডাক্সিং ও চাং'আন একে অন্যের পরিবর্তিত নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে যদিও পরবর্তী তাং রাজবংশ সময়কালে তা চাং'আন নামে পরিচিত ছিল।
৫৮২ সালে তিনি ইয়ুচি জিওংকে সমর্থন না দেওয়ায় পশ্চিম লিয়াং সম্রাট মিং-এর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পশ্চিম লিয়াংয়ের রাজধানী জিয়াংলিং থেকে সেনা প্রত্যাহার করে স্বাধীনভাবে সরকার পরিচালনা করতে অনুমতি দেন। এছাড়া তিনি সম্রাট মিংয়ের কন্যা সিয়াওকে তার পুত্র জিন যুবরাজ ইয়াং গুয়াংয়ের স্ত্রী ও যুবরাজ্ঞী হিসেবে গ্রহণ করেন। ৫৮৫ সালে সম্রাট মিংয়ের মৃত্যুর পর পশ্চিম লিয়াং সম্রাট জিং সিংহাসনে আরোহণ করলে সম্রাট ওয়েন পুনরায় জিয়াংলিংয়ে সেন মোতায়ন করেন এবং পশ্চিম লিয়াং অঞ্চল তার সেনা শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন।
৫৮৩ সালের বসন্তে তুজুয়েরা মতানৈক্যে পৌঁছালে সম্রাট ওয়েন স্বস্তি পান এবং তার ভাই ওয়েই যুবরাজ ইয়াং শুয়াংকে আশিনা শেতুর বিরুদ্ধে আক্রমণের আদেশ দেন। ইয়াং শুয়াং জয়লাভ করে, এবং তার কিছু সৈন্য নিয়ে সেনাপ্রধান ইয়িন শুউ গাওকে পরাজিত করে তাকে খিতানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু পালনোর সময় গাও তার অধস্তন কর্তৃক নিহত হলে উত্তর কির অবশিষ্ট অস্তিত্বধ্বংস হয়। আশিনা শেতুর পরাজয়ের পর তার অধস্তনরা নিজেদের মধ্যে এমনকি আশিনা শেতুর সাথে বিবাধে জড়িয়ে পড়লে সুই কোনো পক্ষকে সমর্থন না দিয়ে শুধু অবস্থা দেখতে থাকে। ৫৮৪ সালে আশিনা শেতু সুইদের কাছে মাথা নত করে এবং অসন্তুষ্ট যুবরাজ্ঞী কিয়ানজিন সম্রাট ওয়েনকে পিতা বলে সম্বোধন করেন। সম্রাট ওয়েন তাকে যুবরাজ্ঞী ডায়ি উপাধি প্রদান করেন।
৫৮৪ সালের গ্রীষ্মে ওয়েই নদীর স্রোতের প্রতিকূলতার কারণে ডাক্সিংয়ে খাবার সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তিনি ইয়ুওয়েন কাইকে ডাক্সিং ও ওয়েই নদীর তং পথে খাল খননের দায়িত্ব দেন। খালটির নামকরণ করা হয় গুয়াংতং খাল, যা খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী রাজধানী অঞ্চল গুয়ানঝংয়ে সরবরাহ সহজ করে দেয়। তা স্বত্ত্বেও ৫৮৪ সালে শরতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সম্রাট ওয়েন তার রাজধানী লুওইয়াংয়ে স্থানান্তর করেন।
৫৮৬ সালে তার কর্মকর্তা চেংয়ের ডিউক লিয়াং শিয়ান, কিয়ের ডিউক ইয়ুওয়েন সিন, ও শুয়ের ডিউক লিউ ফাং – তিনজনই ছিলেন সম্রাটের বন্ধু, বিদ্রোহ সৃষ্টির আশঙ্কায় দোষী সাবস্ত করা হয় এবং তাদের হত্যা করা হয়। পরের বছর ৫৮৭ সালের বসন্তে তিনি তার খাল খনন কাজ জারি রাখেন এবং ইয়াংজি নদী ও হুয়াই নদীর মধ্যে পণ্য সরবরাহ বজায় রাখার জন্য শানইয়াং খাল খনন করেন।
৫৮৮ সালের বসন্তে সম্রাট ওয়েন চেনদের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেন এবং তার পুত্র ইয়াং গুয়াংকে প্রধান করে, তার অপর পুত্র কিন যুবরাজ সুই যুবরাজ ইয়াং জুন ও ইয়াং সুকে নিয়ে আক্রমণের দায়িত্ব দেন। গাও জিয়ং ইয়াং গুয়াংয়ের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫৮৯ সালে সুই সেনাপ্রধান হেরুও বি ইয়াংজি নদী পার হয়ে জিংকও (বর্তমান ঝেনজিয়াং, জিয়াংসু) ও আরেক সুই সেনাপ্রধান হান কিনহু ইয়াংজি নদী পার হয়ে চাইশিতে (বর্তমান মা'আনশান, আনহুই) যান। ইতিমধ্যে ইয়াং সু ইয়াংজি নদীর পশ্চিম তীরে এবং ইয়াং জুন ইয়াংজি নদীর মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করেন, যাতে চেন রাজধানী জিয়াংকাংয়ে কেউ সাহায্যের জন্য না আসতে পারে। হেরুও কিছুদিনের মধ্যে চেন সেনাপ্রধান সিয়াও মোহেকে পরাজিত করেন এবং বন্দী করেন। চেন শুবাওকে বন্দী করা হয় এবং তার কোনো ক্ষতি না করে তাকে চাং'আনে প্রেরণ করা হয়। সেখানে সম্রাট ওয়েন তাকে এবং তার পরিবারকে সম্মানিত অতিথির মর্যাদা প্রদান করেন। কয়েকজন চেন সেনাপ্রধান কিছু সময়ের জন্য পরাজয় মেনে ন নিয়ে যুদ্ধ করেন কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে সুইরা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ সাম্রাজ্য সময়কাল শেষ হয় এবং সুইরা চীনকে পুনরায় একত্রিত করেন।
রাজকর্মকর্তা লি ডেলিন চেন বিজয়ের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগে অবদান রাখায় রাজপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ লাভ করতে পারে এই জন্য ৫৯০ সালে হিংসার বশবর্তী হয়ে কয়েকজন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিলে সম্রাট ওয়েন তা বিশ্বাস করেন এবং তাকে রাজদরবারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রাদেশিক গভর্নর নিয়োগ করেন, যাতে তিনি তার বাকি জীবনে কেন্দ্রীয় সরকারে ফিরে আসতে না পারে।
চেন বিজয়ের পর সুইরা পূর্ববর্তী চেন অঞ্চলে তাদের আইনকানুন প্রয়োগ করতে থাকলে সেখানকার অভিজাত সম্প্রদায় অসন্তোষ প্রকাশ করে, যেহেতু চেন ও তাদের পূর্ববর্তী দক্ষিণ সাম্রাজ্যের অধীনে তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেত। সু ওয়েই য়ু জিয়াও (পাঁচ শিক্ষা) নামে এক নির্দেশ জারি করে এবং সাবেক চেনের সকল প্রজাদের তা পড়তে এবং মুখস্থ করতে নির্দেশ দেন, যা অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি করে। সুই চেন প্রজাদের গুয়াংঝং অঞ্চলে স্থানান্তর করতে পারে এমন গুজব শুনা গেলে কিছু চেন সম্প্রদায় বিদ্রোহ শুরু করে কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে। সম্রাট ওয়েন ইয়াং সুকে বিদ্রোহ দমনের জন্য পাঠান এবং কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্রোহ নিপাত করা হয়।
৫৯১ সালে তুয়ুহুন রাজ্যের খান মুরং শিফু শান্তির প্রস্তাব দেন এবং রীতি অনুসারে তার কন্যাকে সম্রাটের উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করার নিবেদন করেন। সম্রাট ওয়েন শান্তির প্রস্তাব গ্রহণ করেন কিন্তু তার কন্যাকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের নিবেদন প্রত্যাখান করেন।
৫৯২ সালে সম্রাট ওয়েন রাজ কোষাগারে খাদ্য ও রেশমের অতিশয্য দেখে কর কমিয়ে দেন এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে দরিদ্রদের কৃষি জমি ফেরত দেওয়ার জন্য দূত প্রেরণ করেন। পরের বছর ৫৯৩ সালে তিনি ইয়াং সুকে চাংআন থেকে দূরে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ প্রাসাদ নির্মাণের দায়িত্ব দেন, প্রসাদটি রেনশুউ প্রাসাদ নামে পরিচিত যা বর্তমান শাআনশির বাওজিতে অবস্থিত। প্রাসাদটি সম্রাট যেমন চেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল হয় এবং তা নির্মাণে অনেক কর্মী মারা যায়। একই বছর যুবরাজ্ঞী ডায়ি এখনো তার উপর অসন্তুষ্ট জানার পর সম্রাট ওয়েন পেই জুকে তার চাচাতো ভাই ও অধস্তন খান ডুলান খান, আশিনা ইয়ংয়ুলু, আশিনা চুলুওহুওয়ের পুত্র কিমিন খান আশিনা রাংআনের কাছে সংবাদ প্রেরণ করেন এই জানানোর জন্য যে আশিনা রাংআন যদি যুবরাজ্ঞী ডায়িকে হত্যা করতে পারেন তবে সম্রাট ওয়েন তার সাথে কোন সুই যুবরাজ্ঞীর বিয়ে দিবেন। আশিনা রাংআন ডায়ির বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের অভিযোগ আনেন এবং আশিনা ইয়ংয়ুলু তাকে হত্যা করেন এবং সুইদের সাথে আরেকটি বিয়ের প্রস্তাব দেন। সম্রাট ওয়েন আরও কোনো সংঘর্ষে না যাওয়ার জন্য যুবরাজ্ঞীকে আশিনা রাংআনের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হন।
৫৯৪ সালে গুয়াংঝং অঞ্চলে খরা দেখা দিলে সম্রাট ওয়েন তার বাসস্থান পরিবর্তন করে স্বল্পদিনের জন্য লুওইয়াংয়ে চলে যান। তিনি তার জনগণের কষ্টের কথা ভেবে প্রায় এক বছর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই বছরের শেষের দিকে ইয়াং গুয়াং সম্রাট ওয়েনকে তাই পর্বতে গিয়ে উপাসনা অনুষ্ঠান করার আর্জি পেশ করেন। সম্রাট ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে তার আর্জি পুরোপুরি গ্রহণ না করে ৫৯৫ সালে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠান পালন করেন এবং দেবতার কাছে খরা মুক্তির প্রার্থনা জানান।
৬০০ সালের শরতে সম্রাজ্ঞী ডুগুর মৌন সম্মতিতে ইয়াং গুয়াং ও ইয়াং সু বিরোধ সৃষ্টি করেন এবং ইয়াং ইয়ং রাজদ্রোহিতা চেষ্টা করছে এই মিথ্যা অভিযোগে তার সহযোগী জি ওয়েইকে হত্যা করেন। সম্রাট ওয়েন ইয়াং ইয়ংকে পদোবনতি দিয়ে ইয়াং গুয়াংকে রাজদরবারের যুবরাজ করেন। সম্রাট ওয়েন ইয়াং ইয়ংয়ের এই বিরোধের পক্ষে রয়েচে সন্দেহে আরও কয়েকজন রাজকর্মকর্তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন য়ুইউয়ানের ডিউক শি ও ইউয়ান মিন।
৬০২ সালে সম্রাজ্ঞী ডুগু মারা গেলে সম্রাট ওয়েন ভেঙ্গে পড়েন। ফলে তিনি তার উপপত্নীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যার মধ্যে তার প্রিয় ছিল উপপত্নী চেন ও চাই। এছাড়া ৬০২ সালে ইয়াং গুয়াং ইয়াং সিউ তার জন্য সমস্যা হয়ে দাড়াতে পারে, তাই তিনি ইয়াং সুকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে অপচয় ও সম্রাট ব্যতীত দ্রব্যাদির ব্যবহারের প্রমাণ সংগ্রহ করতে বলেন। ইয়াং সু প্রমাণাদি সম্রাটের নিকট পেশ করলে সম্রাট ওয়েন ইয়াং সিউকে রাজধানীতে ডেকে পাঠান। ইয়াং সিউ রাজধানী আসার পর ইয়াং গুয়াং আরও প্রমাণ পেশ করেন যে ইয়াং সিউ সম্রাট ওয়েন ও ইয়াং লিয়াংকে অভিশাপ দিয়েছেন। রাগের বশবর্তী হয়ে সম্রাট ওয়েন ইয়াং সিউকে সাধারণ জনগণ হিসেবে পদোবনতি দেন এবং তাকে গৃহবন্দী করেন।
৬০৪ সালে সম্রাট ওয়েন রীতি অনুসারে গরম থেকে রক্ষার জন্য রেনশুউ প্রাসাদের যান। জাদুকর ঝাংচউ তাইয়ি তাকে সেখানে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেন এবং বলেন তিনি সেখানে গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না। তা স্বত্ত্বেও তিনি সেখানে যান এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন ও ৬০৪ সালের শরতে তিনি মারা যান।[১৫] তাকে ইয়াংলিং জেলার তাইলিং তুমুলুস সমাধিতে সম্রাজ্ঞী ডুগুর পাশে সমাধিস্ত করা হয়।
সম্রাট ওয়েন কীভাবে মারা যান এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ ইতিহাসবেত্তা মনে করেন সম্রাট ওয়েন অসুস্থ হয়ে পরলে ইয়াং গুয়াং তার উপপত্নী চেনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। চেন সম্রাট ওয়েনকে তা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার কন্যা ইয়াং আয়ুর (যুবরাজ্ঞী লানলিং) স্বামী রাজকর্মকর্তা লিউ শু ও লংগুর ডিউক ইউয়ান ইয়ান ইয়াং ইয়ংকে ডেকে পাঠান তাকে পুনরায় যুবরাজ করার জন্য। ইয়াং গুয়াং এসব কিছু জানার পর ইয়াং সুকে সঙ্গে নিয়ে লিউ ও ইউয়ানকে বন্দী করেন এবং তার সহযোগী ঝাং হেংকে সম্রাট ওয়েনকে হত্যা করার জন্য পাঠান ও ঝাং তাকে হত্যা করেন। পরে তিনি উপপত্নী চেন ও চাইকে তার উপপত্নী হতে বাধ্য করেন এবং ইয়াং ইয়ংকে হত্যা করানোর পর সম্রাট ওয়েনের মৃত্যুর খবর প্রচার করে সম্রাট ইয়াং উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সুই সম্রাট ওয়েন জন্ম: ৫৪১ মৃত্যু: ৬০৪
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী উত্তর ঝও সম্রাট জিং পশ্চিম লিয়াং সম্রাট জিং চেন শুবাও |
চীনের সম্রাট সুই সাম্রাজ্য ৫৮১–৬০৪ |
উত্তরসূরী সুই সম্রাট ইয়াং |
Chinese royalty | ||
পূর্বসূরী নিজে সুই ডিউক হিসেবে |
সুই যুবরাজ ৫৮১ |
সিংহাসন একত্রীকরণ |
চীনা আভিজাত্য | ||
অজ্ঞাত | চেংজি ডিউক ৫৫৫–৫৫৭ |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত | ডাক্সিন জেলার ডিউক ৫৫৭–৫৬৮ |
অজ্ঞাত |
পূর্বসূরী ইয়াং ঝং |
সুই ডিউক ৫৬৮–৫৮১ |
উত্তরসূরী নিজে সুই যুবরাজ হিসেবে |